জামালপুর প্রধানত সীমান্তবর্তী জেলা। উত্তরে ভারতের মেঘালয় রাজ্য, পশ্চিম-উত্তরে বগুড়া ও গাইবান্ধা, পশ্চিমে সিরাজগঞ্জ, দক্ষিণে টাঙ্গাইল, পূর্ব-উত্তরে শেরপুর এবং পূর্বে ময়মনসিংহ জেলা অবস্থিত। মনে করা হয় যে, হযরত শাহ্ জামাল (রঃ) আউলিয়ার পদচারণায় এই জনপদ গড়ে উঠে। তবে বর্তমানে জেলার কোথাও কোথাও মোঙ্গলীয় জাতিভূক্ত আদিবাসী, গারো, হাজং ও কোচ জনগোষ্ঠীর বসবাস দেখে ধারণা করা যায়, খ্রীস্টপূর্ব কালেও এই জনপদের গড় ও পাহাড়ী এলাকায় জনবসতি ছিল। তখন এই জনপদের ভূ-প্রকৃতি ও ভৌগোলিক পরিধি এখনকার মতো সুবিস্তৃত ছিল না। মূল ভূ-খন্ডের পশ্চিম প্রান্ত দিয়ে যমুনা এবং পূর্ব প্রান্তে গাড়ো পাহাড় থেকে পূর্ব-দক্ষিণ প্রান্তের গড় সিংহজানী পর্যন্ত মধ্যবর্তী বিস্তৃত ভাগ জুড়ে ব্রহ্মপুত্র নদ প্রবহমান ছিল। ব্রহ্মপুত্র নদ দ্বারা বিভক্ত উত্তর ভাগের গাড়ো পাহাড় এলাকাটি প্রাচীন রাজ্য কামরূপ এবং দক্ষিণ ভাগের গড় সিংহজানী এলাকা পৌন্ডবর্দ্ধনের অন্তর্ভূক্ত ছিল। কালক্রমে যমুনা-ব্রহ্মপুত্র নদের প্রবাহমানতা ও ভাঙা-গড়ার ভেতর দিয়ে পলি জমে জমে বর্তমান জেলার উর্বর সমতল বিস্তৃত ভূ-ভাগ গড়ে উঠে। একই সঙ্গে উদ্ভব ঘটে ঝিনাই, জিঞ্জিরাম, বংশ ও ঝাঁরকাটা নদীসহ অসংখ্য খাল ও বিলের। পরিবেশের বিবর্তন ধারায় সেগুলোর বেশির ভাগ আজ নিশ্চিহ্ন হওয়ার পথে। পলি জমে জমে চাষাবাদযোগ্য সমতল ভূমির উত্থান ও বিস্তৃতির সাথেও বিভিন্ন জনগোষ্ঠীর মিশ্রণ প্রক্রিয়ায় এই জনপদে গড়ে উঠে জনবসতি। গড়ন ও বিকাশের সময় সমগ্র জনপদটি এক সুদীর্ঘ কালব্যাপী প্রাচীন বাংলার গৌড়ের অধীন ছিল। সে সময় গৌড়ের আফগানদের সাথে দিল্লীর মোঘলদের রাজ্য বিস্তার নিয়ে সংঘাত চলাকালে আফগানরা মোঘলদের আক্রমণ প্রতিরোধ করার জন্য পাথালিয়া মৌজায় একটি ঘাঁটি স্থাপন করেছিল। বর্তমান পাথালিয়া রাস্তাটি “পল্টন” নামে জনশ্র“তি থেকেই অতীতকালে এখানে আফগান সেনাদের ঘাঁটি স্থাপনের ধারণা করা হয়।