শিক্ষা

১৭৮৭ সালে বৃহত্তম ময়মনসিংহ জেলা প্রতিষ্ঠার দীর্ঘ ৭ বছর ইংরেজ সেনা ক্যাম্পের অধিনায়কদের দ্বারা নবগঠিত জামালপুর মহকুমার প্রশাসনিক কর্মকান্ড পরিচালিত হয়। ১৮৫৩ সালে টি এজকিয়েল প্রথম সিভিলিয়ন মহকুমা প্রশাসক নিযুক্ত হন। ততকালীন ৬৪ জন মহকুমা প্রশাসকের মধ্যে বাংলার বরণ্য ব্যক্তিত্ব শের-ই-বাংলা এ. কে. ফজলুল হক ছিলেন অন্যতম। তিনি ১৯০৮ সালে মহকুমা প্রশাসকের দায়িত্বে নিযুক্তির ১ বছর পর চাকরি থেকে ইস্তফা দিয়ে কৃষক আন্দোলনে যোগ দেন। টি. এ. ডনো ছিলেন দীর্ঘকালীন সময়ের মহকুমা প্রশাসক। এই ইংরেজ ব্যক্তিকেই জামালপুরের আধুনিক শিক্ষার অগ্রদূত বলা হয়। ১৮৫৭-১৮৭৪ সাল পর্যন্ত দায়িত্ব পালনকালে তিনি মহকুমা শহরে সর্বপ্রথম একটি মাইনর স্কুল প্রতিষ্ঠা করেন। ডনো তার সরকারী বাসভবনে বাতাসায় আকৃষ্ট করে ছাত্রদেরকে লেখাপড়ায় উতসাহ যোগাতেন। স্কুলটি প্রাতিষ্ঠানিক ভাবে স্বীকৃতি প্রাপ্তির পূর্বে ১৮৬৭ সালের হিসেবে তখনকার বৃহত্তর ময়মনসিংহ জেলার সরকারী সাহায্য প্রাপ্ত ইংরেজী স্কুলের সংখ্যা ছিল ১৭ টি। আর সরকারী ও বেসরকারী বিভিন্ন পর্যায়ের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা ছিল মাত্র ১০৯ টি। কিন্তু বর্তমানে প্রাথমিক পর্যায় থেকে উচ্চতর পর্যন্ত বিভিন্ন পর্যায়ে সর্বমোট শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা ১৩৫১ টি। ডনো সাহেবের এই স্কুল প্রতিষ্ঠার মাধ্যমেই জামালপুরের শিক্ষার দ্বার উন্মোচিত হয়। পরে স্কুলটি ডনো স্কুল নামে এন্ট্রাস স্কুলে রূপান্তরিত হয়। সেটি আজ ঐতিহ্যবাহী জামালপুর জিলা স্কুল নামে পরিচিত। এই স্কুলে পাঠাগার স্থাপনের মাধ্যমে ডনো সাহেব পাবলিক লাইব্রেরি প্রতিষ্ঠার সূচনা করেন। দেশ বিভাগোত্তর কালে ইংরেজ আমলেই জামালপুর মহকুমায় আধুনিক শিক্ষার প্রসার ঘটে। ১৮৯৬ সালে সরিষাবাড়ী হাই স্কুল এবং ১৯৪৬ সালে মহকুমা শহরে প্রতিষ্ঠিত হয় মাদারগঞ্জের দানবীর আলহাজ্ব আশেক মাহ্মুদ তালুকদারের আর্থিক সহায়তায় ও তার নামানুসারে উচ্চতর বিদ্যাপীঠ বর্তমান সরকারী আশেক মাহ্মুদ কলেজ। মসজিদ-মক্তব ভিত্তিক ধর্মীয় শিক্ষার প্রসার লাভ করে এরও অনেক আগে। পিংনায় যমুনার পূর্ব অববাহিকায় কাওয়ামারা স্থানের তিন গম্বুজ বিশিষ্ট মসজিদটি এই অঞ্চলের সবচেয়ে প্রাচীন বলে মনে করা হয়। সরিষাবাড়ীতে মরহুম আলহাজ্ব রিয়াজ উদ্দিন তালুকদার তাঁর নিজস্ব বাড়ির আঙিনায় নির্মাণ করেন আরেকটি সুদৃশ্য তিন গম্বুজ বিশিষ্ট মসজিদ। পরবর্তীতে সরিষাবাড়ীতে আলিয়া মাদ্রাসা এবং বেলটিয়ায় সিনিয়র দাখিল মাদ্রাসাসহ কয়েকটি মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে ধর্মীয় শিক্ষা লাভের পথকে করেছে প্রশস্ত।