ব্যবসা-বাণিজ্য

যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নতির সাথে মহকুমার বিভিন্ন স্থানে শিল্প ও ব্যবসা-বাণিজ্য কেন্দ্র গড়ে উঠে। ১৯০১ সালে ভারতের রাজ পুতনার অধিবাসী কুণিরাম শেঠী সর্বপ্রথম সরিষাবাড়ীতে ‘কুণিরাম শেঠী এন্ড কোং’ নামে একটি পাটক্রয় কেন্দ্র স্থাপন করেন। ১৯০৫ সালের মধ্যে এই মহকুমার একমাত্র সরিষাবাড়ীতেই ভারতীয় ব্যবসায়ী মালিকানায় বিড়লা ব্রাদার্স লিঃ, মেসার্স লক্ষ্মী নারায়ণ মুদ্রা লিঃ, লুইচ ডেফার্স এন্ড কোং লিঃ, র‌্যালী ব্রাদার্স লিঃ ও বেঙ্গল জুট বেলিং সহ কয়েকটি জুট প্রেস হাউস প্রতিষ্ঠা লাভ করে কলকাতা ও ইউরোপ কেন্দ্রিক ব্যবসায় প্রসার লাভের কারণে সরিষাবাড়ি এলাকাটি বাণিজ্যিক রপ্তানি কেন্দ্র হিসেবে উপমহাদেশের দেশগুলোর কাছে পরিচিত ছিল। ব্রহ্মপুত্রের ধারে সদর থানার ইটাইল নদীবন্দর হতে এক সময় পাট নিয়ে নৌকা কলকাতা, মাদ্রাজ এবং হুগলী যেত। একসময় সরিষাবাড়ীতে উতপাদিত পাট নেয়ার জন্য হাজার হাজার নৌকা যমুনা নদীতে ভীড় করতো। এছাড়াও সড়ক এবং রেলপথে রাজধানী ঢাকার সাথে জামালপুরের যোগাযোগ ব্যবস্থা দু’শ বছরের পুরোনো। গত ৫০ বছরে একাধারে জামালপুর জেলা ধান উতপাদনের ল্যমাত্রা ছাড়িয়ে রয়েছে। ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট-এর আবিষ্কার করা বিভিন্ন প্রকার উন্নত জাতের ধান উতপাদনে জামালপুরের জুড়ি নেই। লক্ষ্মীর চর, তুলসীর চরের সবজি এখন ঢাকার ত্রিশ ভাগ বাজার দখল করে আছে। ধান, পাট, সবজি ইত্যাদির উতপাদনের এ অবস্থা দেখে সরকার বহুপূর্বে জামালপুর শহরে একটি আঞ্চলিক কৃষি গবেষণা কেন্দ্র স্থাপন করেছেন। এ থেকে বোঝা যায় যে, জামালপুর একটি সম্ভাবনাময় বাণিজ্য কেন্দ্র হিসেবে গড়ে উঠতে পারে। কিন্তু তা নানা কারণে গড়ে উঠতে পারেনি। প্রচুর পরিমাণে উৎপাদিত পণ্য সব সময় ঢাকায় রপ্তানী হচ্ছে। স্থানীয়ভাবে বাজারজাত হচ্ছে না। এমনও দেখা গেছে যে, ঢাকার বাজারে পৌঁছা লক্ষ্মীর চরের যে বেগুন ২০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হয় তা লক্ষ্মীর চরে ২ টাকা কেজি। কেন এ অব্যবস্থা ? নান্দিনার আশেপাশে কয়েকটি জায়গায় সরকারী বা বেসরকারী উদ্যোগে হিমাগার প্রতিষ্ঠিত হলে কৃষকের ন্যায্য মূল্য পাওয়া নিশ্চিত হতে পারে। কৃষকের তুলনায় এক রাস্তার শহর কেন্দ্রিক জামালপুরের ছোট ছোট দোকানদারেরা ভালো আছেন। ছোট খাট দু’একটি সুপার মার্কেটেও ভালো ব্যবসা চলে। সম্ভাবনাময় কৃষি থাকা সত্ত্বেও কৃষিভিত্তিক কোন শিল্প কারখানা এখনো গড়ে উঠেনি। ১৯৮০ সালে সোয়া ২৬ একর জমিতে বিসিক শিল্প নগরীর স্থান নির্ধারণ করে দিলেও এর শতকরা পঁচানব্বইটি প্লট এখনো ফাঁকা। উদ্যোক্তারা এগিয়ে আসেনি। আর কিছু না হলেও জামালপুরের ঐতিহ্য পাট নিয়ে কিছু করা যেতো। তাও নানা কারণে সম্ভব হয়নি। পাট শিল্প বলে তেমন কিছু নেই। পাট ক্রয় কেন্দ্রগুলো এখনো পরিত্যক্ত। তবে নকশী কাঁথা তথা সূচিকর্ম শিল্পের অবারিত সম্ভাবনা সবাই দেখতে পান। যোগ্য পৃষ্ঠপোষকতা এটাকে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে পৌঁছাতে পারে।