স্বাধীনতার ৩৫ বছর পরও অবহেলিত জামালপুরে মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিচিহ্ন গুলো। যথাযথ পরিচর্যা ও সংরক্ষণের অভাবে ১১ নং সেক্টরের অধীন জামালপুর জেলার মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিচিহ্ন ও বধ্যভূমিগুলো আজ হারিয়ে যেতে বসেছে। গুরুত্বপূর্ণ এই রণাঙ্গনের স্মৃতিচিহ্ন গুলো সংরক্ষণের কোন ব্যবস্থা না নেয়ায় নতুন প্রজন্মের নিকট মুক্তিযুদ্ধের গৌরব গাথা আড়ালে চলে যাওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। একাত্তরে যুদ্ধের শুরুতেই বৃহত্তর ময়মনসিংহ ছাড়াও আশ-পাশের বেশক’টি জেলা নিয়ে ১১নং সেক্টর গঠিত হয়। ভারতের মেঘালয় রাজ্যের তুরা জেলার মহেন্দ্রগঞ্জ এলাকায় কর্নেল তাহেরের নেতৃত্বাধীন ১১নং সেক্টরের হেড কোয়াটার স্থাপন করা হয়। বিপরীতে জামালপুর জেলা সদরের পিটিআই ও ধানুয়া কামালপুরে হানাদার বাহিনীর শক্তিশালী ঘাটি স্থাপন করা হয়। স্বাধীনতা যুদ্ধে এই ১১নং সেক্টরের গুরুত্বপূর্ণ অবদান রয়েছে। এই সেক্টরের অনেক যুদ্ধই মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসে গুরুত্বপূর্ণ জায়গা পেয়েছে। যুদ্ধকালীন সময়ে হানাদার বাহিনীর অসংখ্য নৃশংতার চিহ্ন আর বধ্যভূমি ছড়িয়ে আছে জেলার বিভিন্ন স্থানে। জেলা সদরের পিটিআই হেড কোয়াটার, বর্তমান ওয়াপদা রেস্ট হাউস, আশেক মাহমুদ কলেজের ডিগ্রি হোস্টেল টর্চার সেল, ব্রক্ষপুত্রের তীরে শ্মশান ঘাট বধ্যভূমি, ফৌতি গোরস্থান বধ্যভূমিতে ধরে এনে অসংখ্য মুক্তিযোদ্ধা ও মুক্তিকামী বাঙ্গালীকে নৃশংসভাবে হত্যা করা হয়। সরিষাবাড়ির বারই পটল এলাকায় একদিনেই হত্যা করা হয় শতাধিক মুক্তিকামী বাঙ্গালীকে। বারই পটল ছাড়াও সীমান্তবর্তী কামালপুরে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে অন্ততঃ ১৫টি গণকবর। স্বাধীনতার ৩৫ বছর যাবত মুক্তিযুদ্ধের এসব স্মৃতিচিহ্ন অযত্ন অবহেলায় হারিয়ে যেতে বসেছে। আশেক মাহমুদ কলেজ ডিগ্রি হোস্টেল টর্চার সেল পরিণত হয়েছে গরুর খোয়াড়ে। একমাত্র কামালপুর বিডিআর ক্যাম্প আর শ্মাশন ঘাট বধ্যভূমি ছাড়া জেলার কোথাও উলেখযোগ্য স্মৃতিচিহ্ন নির্মাণ হয়নি। মুক্তিযুদ্ধের গৌরব গাথা তুলে ধরতে টর্চার সেল, বধ্যভূমি, গণকবরসহ সমস্ত স্মৃতিচিহ্ন যথাযথ সংরক্ষণের ব্যবস্থা নেয়া হবে এটাই এই অঞ্চলের মুক্তিযোদ্ধা ও সাধারণ মানুষের দাবি।