মহকুমা থেকে জেলা


অতীতকাল থেকে পর্যায়ক্রমে সামাজিক, রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে ক্রমবর্ধমান উন্নয়ন ও অগ্রগতির ধারায় আঞ্চলিক গুরুত্ব বৃদ্ধির সাথে জামালপুরকে প্রশাসনিক জেলায় রূপান্তরের দাবি উঠেছিল দীর্ঘদিন আগেই। বৃটিশ শাসনামলে জামালপুর মহকুমার আয়তন ছিল ১৩১৫ বর্গমাইল। জামালপুর সদর থেকে সমগ্র অঞ্চলের আইন শৃংঙ্খলা ও রাজস্ব আদায়ের দায়িত্ব ছিল মহকুমার হাকিম ও অন্যান্য প্রশাসনিক কর্মকর্তার উপর। এ সমগ্র অঞ্চলের শাসনভার বিকেন্দ্রীকরণ করার ল্েয তদানিন্তন লেফটেন্যান্ট গভর্ণর স্যার রিচার্ড টেম্পল ১৮৭৬ সালে জামালপুরকে জেলায় প্রস্তাব করেন। এরপর ১৯১২ সালে বৃটিশ গভর্ণর জেনারেল লর্ড কার্জন জামালপুরকে বৃহত্তর ময়মনসিংহ অঞ্চলের দ্বিতীয় প্রশাসনিক জেলায় উন্নীত করার পরিকল্পনা গ্রহণ করেন। ১৯১৭ সালে জেলা গঠনের জন্য ৩৯২.৪৫১ একর জমি পৌর এলাকায় অধিগ্রহণ করা হয়। সে সময় জামালপুর শহর সংলগ্ন পাথালিয়া, দেওয়ানপাড়া, বনপাড়া, চন্দ্রাবাসীরা নামমাত্র মূল্যে তাদের ভূমির স্বত্ব ত্যাগ করে অতুলনীয় ত্যাগের দৃষ্টান্ত করেছিলেন। উক্ত অধিগ্রহণকৃত জমিতে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়, জজ কোর্ট, পুলিশ সুপারের কার্যালয়, জিলা স্কুল, জেলখানা, পৌরসভা, হাসপাতাল, রাস্তাঘাট ও অন্যান্য স্থাপনার নীল নকশা পর্যন্ত তৈরী করা হয়েছিল। বর্তমান সময়ে উক্ত অধিকৃত ৯৩ বিঘা জমির উপর গড়ে উঠেছে সরকারী আশেক মাহ্মুদ কলেজ, কৃষিফার্ম, বিডিআর ক্যাম্প, হাসপাতাল, জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপারের কার্যালয় ও স্টেডিয়াম। বিশ্বযুদ্ধের দামামা এবং দেশ বিভক্তির আন্দোলন ও নানা ডামাডোলের মধ্যে জেলার দাবিটি চাপা পড়ে যায়। ৭১ এ মুক্তিযুদ্ধের রক্তাক্ত পট পরিবর্তনের মধ্যে দিয়ে বাংলাদেশ নামে স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্রের অভ্যুদয়ের পর আবারো জেলা ঘোষণার দাবি সোচ্চার হয়ে উঠে। ১৯৭৮ সালের ২৬ ডিসেম্বর তৎকালীন রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান জামালপুর মহকুমাকে বাংলাদেশের ২০তম জেলা রূপান্তরের ঘোষণা করেন। ১৯৭৯ সালের ১ মে তৎকালীন রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান নবগঠিত জেলার প্রশাসনিক কর্মকান্ডের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন। নবগঠিত এই জেলায় প্রথম জেলা প্রশাসকের দায়িত্বভার গ্রহণ করেন জনাব নুরুল ইসলাম।