নয়নাভিরাম গারো পাহাড়

সৌন্দর্য্যে ঐশ্বর্য্যে প্রকৃতির রূপে লাবণ্যে মনমুগ্ধকর নৈসর্গিক সৌন্দর্যবেষ্টিত পাহাড়ী এলাকার জামালপুর জেলায় বকশিগঞ্জের গারো পাহাড়। আমাদের গারো পাহাড়ও নজর কেড়েছে দেশের ভ্রমণবিলাসী দর্শনার্থীদের। আমরা নতুন কিছু দেখার, পাওয়ার আশায় উম্মুখ চিরকাল। আর তা যদি হয় হাতের কাছে, তবে সব কিছু ভুলে ছুটে যাওয়ার তাগিদ মনকে তাড়া দেয়। এমনই এক জায়গা লাউ চাপড়া।
অবস্থান ঃ জামালপুর জেলার বকশীগঞ্জ উপজেলা সদর থেকে ১২ কিলোমিটার উত্তরে ভারতের মেঘালয় সীমান্ত ঘেঁষে সরকারি ৭ হাজার ৯৯ একর ৬২ শতাংশ জায়গা জুড়ে গারো পাহাড়। এছাড়াও আদিবাসীদের কাছ থেকে ক্রয়কৃত ব্যক্তি মালিকানায় রয়েছে বেশ কিছু পাহাড়, বনভূমি। ধানুয়া কামালপুর ইউনিয়নের লাউ চাপড়া ও ডুমুরতলা মৌজার পুরোভাগই প্রায় বনভূমি।
কেন আসবেন ঃ প্রকৃতির উজাড় করা সৌন্দর্য্যরে মহিমায় উদ্ভাসিত একটি গ্রামীণ জনপদ। পাথর আর বনরাজির অপূর্ব সম্মীলন আকর্ষণ করেছে প্রকৃতিপ্রেমী পর্যটকদের। অসংখ্য পর্যটক শীতের কুহেলিকা আর পাখির গানের টানে এখানে আসেন। আর তাই শীত মৌসুমের প্রতিদিন অসংখ্য অতিথির পদভারে সেই নি:ভৃত অঞ্চলটিও প্রাণ প্রায় মৌসুম উৎসবের।এখানে ১৯৯৬ সালে জামালপুর জেলা পরিষদ ২৬ একর জায়গায় গারো পাহাড়ের চূঁড়ায় নির্মাণ করেছে পিকনিক স্পট “ণিকা”। ণিকা পিকনিক স্পটে ১৫০ ফুট উঁচু পাহাড়ের চূঁড়ায় নির্মিত হয়েছে ৬০ ফুট উঁচু সুরম্য টাওয়ার। প্রতিদিন শত শত কার, বাস, মাইক্রোবাসে আসা হাজার হাজার মানুষের কলরবে এই লাউ চাপড়ার ণিকা পিকনিট স্পটটি হয়ে উঠে মুখরিত। শীত মৌসুমে পর্যটকদের আসা, থাকা এবং যাওয়াকে নিশ্চিত আর নিরুদ্বিগ্ন করতে ণিকা পিকনিক স্পটের পাশে সম্পূর্ণ ব্যক্তি মালিকানায় একটি বিলাসবহুল টুরিস্ট কমপ্লেক্সও গড়ে উঠেছে । এখানে অবস্থান করে প্রকৃতি উপভোগ করা যায় খুব সহজেই।
কি দেখবেন ঃ গারো পাহাড়ের চূঁড়ায় দাঁড়িয়ে চারদিকে তাকালে চোখে পড়বে শুধু পাহাড় আর পাহাড়। যেন সবুজ গালিচায় মোড়ানো প্রকৃতি। এসব পাহাড়ের নিচ দিয়ে প্রবাহিত হয় স্বচ্ছ পানির অজস্র ঝরণাধারা। নানা জাতের পাখির কলকাকলি। কোথাও গহীন জঙ্গল। আবার কোথাও কোথাও দেখা যাবে বৃহীন ন্যাড়া পাহাড়। আরো দেখা যাবে ওপারে সীমানা পেরিয়ে ভারতের মেঘালয়ের সুবি¯তৃত পাহাড় এবং ভারত সীমান্ত। পাহাড়ের কোলে সূর্যোদয় ও সূর্যাস্ত দর্শন। এছাড়া হেঁটে চারদিকে ঘুরে বেড়ানোর জন্য রয়েছে মনোরম পরিবেশ। পাহাড়ের বিরাট এলাকা জুড়ে রয়েছে বাহারি গাছ-গাছালিতে সৌন্দর্যমন্ডিত সবুজের সমারোহ।
যাদের বসবাস ঃ দিঘলাকোনা, বালুঝুড়ি, সাতানিপাড়া, পলাশতলা, লাউ চাপড়া, মেঘাদল, শুকনাথপাড়া প্রভৃতি গ্রামের গহীন গারো পাহাড়ের চুঁড়ায় কিংবা পাশে কোল ঘেঁষে সবুজের আড়ালে খড়ের অথবা মাটির ঘরে বসবাসরত গারো, কোচ ও হাজংসহ বিভিন্ন আদিবাসী উপজাতি।
সম্পদ ঃ এই বিশাল গারো পাহাড়ে রয়েছে অনেক খনিজ সম্পদ। এর মধ্যে নুড়ি পাথর, বোল্ডার পাথর প্রসিদ্ধ। পাহাড়ি সম্পদ আহরণে সরকারি ও বেসরকারি সংস্থার উদ্যোগে ব্যাপক ভিত্তিক শিল্প গড়ে উঠার উজ্জ্বল সম্ভাবনা রয়েছে। সরকারি উদ্যোগের অভাবে বর্তমানে চোরাকারবারী দল অবৈধভাবে পাহাড় কেটে বালি, পাথর উত্তোলন করছে। সেই সাথে বিনষ্ট করছে পাহাড়ের মূল্যবান বৃক্ষ। ফলে পাহাড়ের বনভূমিতে মারাত্মক তিসাধন ও পাহাড়ের প্রাকৃতিক ভারসাম্য নষ্ট হচ্ছে।
সম্ভাবনা ঃ লাউ চাপড়া ণিকা পিকনিট স্পটকে ঘিরে সরকারিভাবে পূর্ণাঙ্গ পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে গড়ে উঠার ব্যাপকভিত্তিক পরিকল্পনা থাকলেও এর কার্যক্রম অত্যন্ত ধীরগতি সম্পন্ন। ফলে সম্ভাবনাময় পর্যটন কেন্দ্র থেকে সরকার কোটি কোটি টাকার রাজস্ব আয় থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। এই গারো পাহাড়ের লাউ চাপড়া পিকনিট স্পটটিতে টেলিফোন লাইন সংযোগ ও বিদ্যুৎ সুবিধাসহ সার্বিক নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা হলে লাউ চাপড়া পিকনিট স্পটটি হয়ে উঠবে দেশের আর একটি বড় ধরনের প্রাকৃতিক সৌন্দর্যমন্ডিত পর্যটন কেন্দ্র। চিরসবুজ ঘেরা নয়নাভিরাম গারো পাহাড়ের নিবিড় মনোমুগ্ধকর পরিবেশ দেশের অন্যান্য দর্শনীয় স্থান পর্যটন স্পটের চেয়ে কোন অংশেই কম নয়।